বাড়ি নির্মাণে খনার বচন

  • Post category:Tips
  • Post comments:0 Comments

বাড়ি নির্মাণে খনার বচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খনার বচন মূলত একটি ঐতিহ্যবাহী কৃষিভিত্তিক উপদেশমূলক ছড়া, যা বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে ব্যবহার হয়। বিশেষ করে বাড়ি নির্মাণ, কৃষিকাজ, জ্যোতিষশাস্ত্র এবং জীবনযাত্রার নানা দিক নিয়ে খনার বচনে পরামর্শ রয়েছে। ৮ম থেকে ১২শ শতাব্দী সময়কালে খনা, যিনি এক প্রখ্যাত লোকজ্ঞানী এবং জ্যোতিষী ছিলেন, তার বচনগুলি বিভিন্ন দিকেই মানুষের কাছে গুরত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

বাড়ি নির্মাণে খনার বচন
বাড়ি নির্মাণে খনার বচন

খনার বচন শুধু কৃষিকাজ বা বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা, আচার-আচরণ এবং সমাজের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়েও তিনি কথা বলেছেন। তাছাড়া, খনার বচনে নির্দিষ্ট কিছু দিন ও সময়ে বাড়ি নির্মাণের পরামর্শ দেওয়া হয়, যাতে সেই সময়ে নির্মাণ কাজ করলে ঘরটি শুভ এবং সফল হয়।

বাড়ি নির্মাণে খনার বচন

“দখিন দুয়ারী ঘরের রাজা,

পূর্ব দুয়ারী তারই প্রজা,

পশ্চিম দুয়ারীর মুখে ছাই,

উত্তর দুয়ারীর খাজনা নাই।”

বাড়ি তৈরীর মাপ

খনার বচন অনুসারে বাড়ি নির্মাণের মাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। তাঁর বচনে বাড়ির আকার ও পরিমাণ সম্পর্কিত কিছু বিশেষ গাইডলাইন রয়েছে, যা মানুষের সুখ-স্মৃদ্ধি ও সৌভাগ্যের জন্য সহায়ক হতে পারে। এই বচনটির মাধ্যমে খনা বাড়ি তৈরির জন্য একটা ধ্বনিত প্রথা বা মাপ নির্ধারণ করেছেন। এটি মূলত বাড়ির দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থের সাথে সম্পর্কিত। এটি বাড়ি তৈরির জন্য মাপের কিছু সূচক প্রকাশ করে:

“০ নাই বশতী
১ এ লোরেচরে
২ এ বসত করে
৩ এ পুইড়া মরে
৪ এ সম্পদ বারে
৫ এ হারানো ধনপাই
৬ মরা যে আয়
৭ মরে পতি”

এটি মূলত বাড়ির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ নির্ধারণের জন্য একটি বিশেষ পদ্ধতি, যেখানে এই সংখ্যা গুলি বাড়ির নির্মাণের বিভিন্ন দিক নির্দেশ করে। খনার বচন অনুযায়ী, এই পরিসরের মধ্যে বাড়ি নির্মাণ করলে সুখ ও সমৃদ্ধি আসে এবং সৌভাগ্য বৃদ্ধি পায়।

এটি বাস্তব জীবনে কীভাবে প্রভাব ফেলে তা কিছুটা বৈষয়িক বা ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাখ্যা করা হয়, যেমন:

  • ০ নাই বশতী: অর্থাৎ, যদি বাড়ির আকার খুব ছোট হয়, তা সুখকর নয়।
  • ৪ এ সম্পদ বারে: বাড়ির আকার যদি সঠিক পরিমাণে হয়, তবে এতে সম্পদ বৃদ্ধি হতে পারে।
  • ৭ মরে পতি: যদি বাড়ির আকার এবং পরিস্থিতি সঠিক না হয়, তাহলে জীবনে সমস্যা হতে পারে।

কিভাবে পরিমাপ করবেন?

এটি এক ধরনের ঐতিহ্যবাহী গণনা পদ্ধতি, যা অনেক পুরনো বিশ্বাস ও প্রথার ওপর ভিত্তি করে তৈরি। এখন, আমি  উদাহরণটি আরও বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করি, যাতে সবাই সহজে বুঝতে পারে।

ধরি, ঘরের দৈর্ঘ্য = ৩০ হাত এবং প্রস্থ = ১০ হাত।

প্রথম ধাপ: দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ যোগ করুন: ৩০ (দৈর্ঘ্য) + ১০ (প্রস্থ) = ৪০

দ্বিতীয় ধাপ: এর সাথে এক যুগ (১) যোগ করুন: ৪০ + ১ = ৪১

তৃতীয় ধাপ: ৮ দ্বারা ভাগ করুন (৮ এর গুণফল নির্ণয় করুন): ৮ * ৫ = ৪০
৪১ – ৪০ = ১

চতুর্থ ধাপ: অবশিষ্ট সংখ্যা দিয়ে মাপ নির্ধারণ করুন: এখানে অবশিষ্ট সংখ্যা ১।
এটি “১ এ লোরেচরে” বা “ঘরটি ছোট এবং এর জন্য শুভ নয়” হিসেবে গণ্য হবে।

এটি এক ধরনের আধ্যাত্মিক বা লোকবিশ্বাসী পদ্ধতি, যার মাধ্যমে বাড়ির গঠন এবং আকারের ওপর দৃষ্টি রাখা হয়, যাতে ভবিষ্যতে সুখ ও সমৃদ্ধি আসে। এমনকি আজকের দিনে অনেকেই এই প্রথা অনুসরণ করে।

খনার বচন কেবলমাত্র একটি ঐতিহ্যগত বিশ্বাস নয়, বরং এটি প্রাচীন জ্যোতিষ বিদ্যার এবং মানবজীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতার সম্মিলন। বহু পুরনো সময় থেকে খনার বচন গ্রাম বাংলার মানুষের জীবনে মিশে আছে এবং এটির ওপর বিশ্বাস রাখতে অনেকেই উপকৃত হয়েছেন।

কেন খনার বচন মেনে বাড়ি করবেন ?

  1. বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ: যদিও আমরা আধুনিক প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়ে গিয়েছি, তবে খনার বচন এমন এক সময়ের শিক্ষা এবং গবেষণার ফল যা দীর্ঘকাল ধরে মানব জীবনের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে এসেছে। একে কুসংস্কার বা অবৈজ্ঞানিক মনে করা কিছুটা অবিচার হতে পারে, কারণ এটি মানুষের জীবনের প্রাকৃতিক এবং আধ্যাত্মিক সংযোগের অংশ।
  2. ভরসা এবং শান্তি: খনার বচন অনুযায়ী, বাড়ির নির্মাণে যদি সঠিক নিয়ম মেনে চলা হয়, তাহলে এক ধরনের মানসিক শান্তি এবং ভরসা তৈরি হয়, যা মানুষের সুখ এবং সমৃদ্ধির দিকে সাহায্য করে। বিশেষভাবে, যারা বিশ্বাস করেন, তাদের জন্য এটি আধ্যাত্মিকভাবে সহায়ক হতে পারে।
  3. বৈদিক এবং জ্যোতিষ শাস্ত্র: খনা একজন প্রখ্যাত জ্যোতির্বিদ ছিলেন, এবং তার বচন অনেকটা জ্যোতিষ শাস্ত্রের ভিত্তিতে তৈরি। গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাব, সময়ের সঠিক ব্যবহার, এবং শারীরিক ও মানসিক কল্যাণের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টা করা হয়েছিল এই প্রাচীন বচনগুলির মাধ্যমে। এর মধ্যে যে গাণিতিক এবং গণনামূলক নিয়ম রয়েছে, তা মানুষের জীবনে সৌভাগ্য আনতে সাহায্য করতে পারে বলে ধারণা করা হয়।
  4. জীবনের অভিজ্ঞতা: বহু পুরনো সময় থেকেই গ্রাম বাংলায় খনার বচন জনপ্রিয় ছিল, এবং এটি বহু প্রজন্মের মানুষের অভিজ্ঞতার সমাহার। এর মধ্যে কিছু আধ্যাত্মিক এবং কিছু আচারিক দিক রয়েছে, যা অনেকের জন্য একটি জীবনযাত্রার নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
  5. পূর্বপুরুষদের শিক্ষা: পূর্বপুরুষরা যে জ্ঞান রেখে গেছেন, তা অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত এবং দীর্ঘকালীন গবেষণার ফলস্বরূপ। বিশেষত, খনার বচন মূলত কৃষিকাজ এবং বাড়ি নির্মাণের জন্য প্রাসঙ্গিক নিয়মাবলী দেওয়ার পাশাপাশি মানুষের জীবনধারার সঙ্গেও সম্পর্কিত ছিল।

এমনকি আধুনিক যুগে আসার পরও অনেক মানুষ খনার বচন এবং প্রাচীন আচার-আচরণ মেনে চলেন, কারণ তারা বিশ্বাস করেন যে এর মাধ্যমে তাদের জীবনে সুখ এবং সমৃদ্ধি আসে। আপনি যদি বিশ্বাস করেন, তাহলে এসব পুরনো বিধি মেনে চলা একটি আধ্যাত্মিক বা সংস্কৃতিক চর্চার অংশ হতে পারে।

আমাদের সেবা সমূহ

নতুন বাড়ি নির্মাণ বা সংস্কারের জন্য সঠিক পরিকল্পনা ও ডিজাইন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সংস্থা আপনাকে বিভিন্ন সেবার মাধ্যমে সমাধান দিতে প্রস্তুত। আমরা প্রতিটি প্রকল্পকে গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করি এবং নিশ্চিত করি যে আপনার স্বপ্নের বাড়ি তৈরি করার প্রতিটি ধাপে আপনার সঙ্গী হয়ে থাকি।

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

আপনি যদি আমাদের সেবাসমূহ সম্পর্কে আরও জানতে চান বা আপনার বাড়ির ডিজাইন নিয়ে আলোচনা করতে চান, তাহলে নিচের যোগাযোগের তথ্য ব্যবহার করতে পারেন:

ফোন

  • 01660-200822
  • 01721-906431

WhatsApp

  • +8801660200822

ঠিকানা

  • Mirpur-1, Dhaka, Bangladesh

সামাজিক মাধ্যম

ইমেইল

উপসংহার

বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে খনার এই বচনটি আপনি নেটে সার্চ করে কোথাও পাবেন না। আমি অনেক কষ্ট করে খনার এই বচনটি সংগ্রহ করেছি। আশা করি, এতে আপনাদের অনেক উপকার হবে। আপনি যদি চান, এই আর্টিকেলটি আপনার সংগ্রহে রাখতে, তাহলে আমাদের এই পেইজটি আপনার ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার করে রাখতে পারেন। এতে করে, আপনার যখন প্রয়োজন হবে, তখন খুব সহজেই এই আর্টিকেলটি পড়তে পারবেন। একই সঙ্গে, আপনার বন্ধু-বান্ধবেরও অনেক উপকারে আসতে পারে।

 

Leave a Reply